গত দুই পর্বের টিউটোরিয়াল এ দেখিয়েছি ফ্রীলান্সারে একাউন্ট করা, প্রোফাইল সাজানো এবং বিড করার নিয়ম। ফ্রীলান্সার নিয়ে এখানেই শেষ নয় আরো পথ বাকী আছে। এই প্লাটফর্ম এর জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরুপে তৈরী করতে হলে অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। তার-ই ধারাবাহিকতায় আজ আলোচনা করবো ফ্রীলান্সার এর মেন্যু নিয়ে।
তবে একটি কথা, এখানে থেকে সব মেন্যু-ই যে আপনার কাজে লাগবে এমনটা নয়। আমি শুধু যেগুলো প্রতিনিয়তই কাজে লাগে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো, এবার আসি বিস্তারিত আলোচনায় …
১. Post Project: এই মেন্যু থেকে আপনি আপনার চাহিদা বা প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোজেক্ট পোস্ট করাতে পাবরেন। প্রত্যেক প্রজেক্ট এর জন্য ফ্রীলান্সার $5 করে চার্জ কাটবে। চার্জটি অবশ্য রি-ফাউন্ডঅ্যাবল (ফেরতযোগ্য)। প্রোজেক্ট এর নাম, ধরন, বিবরন, বাজেট, সময় এবং ফিচার নিবার্চন করে তারপর প্রোজেক্ট প্রিভিউ দেখুন এবং সর্বশেষে ফিনিশ করুন। ব্যাস, আপনার প্রজেক্ট কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফ্রীলান্সার এ পাবলিশ হবে।
২. Browse Jobs: এই মেন্যুর আওতায় ৪টি সাব-মেন্যু পাবেন।
খ. Latest Featured: প্রোজেক্ট পোষ্ট করার সময় Optional Features- এ ৪ ধরনের Features দেয়া থাকে। আপনার প্রোজেক্টটি যদি Latest Features এর আওতায় আনতে ইচ্ছুক হন তবে এই Featured অপশনটি নির্বাচন করে দিতে হবে। তবে, এর জন্য ফিচার ভেদে আলাদা ফি ফ্রীলান্সার কেটে নিবে।
গ. Latest Full Time: নাম-টি দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে প্রোজেক্ট গুলো সব ফুল টাইম এর। আমরা যেমন অফিসিয়াল সময় ধরি, সকাল ৯.০০ থেকে বিকেল ৫.০০ টা পর্যন্ত। ঠিক এমনটাই এখানেও। তবে, যে সে এই প্রোজেক্ট এর কাজ পাবেন না এটা ১০০% ঠিক। আপনার অভিজ্ঞতা, কাজ করার মানুসিকতা সব কিছু বায়ার পরীক্ষা করবে তারপর যদি আপনি তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারেন তাহলে কাজ দিবে। মাসে $৭৫০-$১০০০ দিবে।
ঘ. Ending Soon: নাম-টি দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে প্রোজেক্ট গুলোর বিডিং সময় শেষের দিকে সেগুলো এখানে প্রদর্শন করবে।
৩. Make Money:
খ. Affiliate Program: এই মেন্যু-এর আওতায় আপনি এফিলিয়েট প্রোগ্রামের লিঙ্ক পাবেন। যেটাকে আমার রেফারেল প্রোগ্রাম নামে জানি। এখানে টেক্ট লিঙ্ক এ্যাড, ব্যানার এ্যাড, আরএসএস ফিড ইত্যাদি আপনার ব্লগ বা ওয়েব সাইটে ব্যবহার করে রেফারেল থেকে আয় করতে পরবেন।
গ. Affiliate API: কাজের ক্ষেত্রে তেমন দরকার নাই।
ঘ. Freemarket Widgets: কাজের ক্ষেত্রে তেমন দরকার নাই।
৪. API: এই পুরো মেন্যুটাই কাজের ক্ষেত্রে তেমন দরকার নাই। তাই এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না।
খ. My Email/Password: এখানে থেকে আপনি আপনার প্রোফাইলের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারবেন।
গ. My Qualifications: আপনি যখন ফ্রীলান্সারে প্রোফাইল তৈরী করেছিলেন ঠিক সেই সময় যা যা কোয়ালিফিকেশন দিয়েছিলেন, প্রয়োজন হলে এখানে থেকে কিছু পবিবর্তন করতে পারবেন। তবে লক্ষণীয়, একটি কোয়ালিফিকেশন সংযুক্ত(চেক) করতে হলে আরেকটি কোয়ালিফিকেশন ডিলিট(আনচেক) করতে হবে।
ঘ. My Credentials: এখানে আপনি আপনার পড়াশুনা, সনদ (সার্টিফিকেট), পুরস্কার, ব্যবসায়িক লাইসেন্স ইত্যাদি সংযুক্ত করতে পারেন। এতে করে আপনার প্রোফাইল আরো শক্তিশালী এবং তথ্যপূর্ণ হবে।
ঙ. View External Profile: এই লিংক-এ গিয়ে আপনি আপনার ফ্রীলান্সারের প্রোফাইল বিস্তারিত দেখতে পারবেন।
চ. My Setting: এখানে থেকে আপনি বিভিন্ন সেটিংস পরিবর্তন করতে পারবেন।
ছ. Upgrade to Gold: এই সাবমেন্যু থেকে আপনি ফ্রীলান্সারে গোল্ড মেম্বার হিসাবে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন। তবে হ্যা, ফি বাবদ প্রতি মাসে $24.95 চার্জ দিতে হবে।
অন্যথায় স্বয়ংক্রীয় ভাবে বাতিল হবে।
৮. Payments: পেমেন্ট সংক্রান্ত সকল তথ্য এখানে।
খ. Automatic Payments: আপনার কোন অনলাইন একাউন্ট (পেপাল, মানিবুকার্স, ওয়েব মানি) এ যদি ডলার না থাকে এবং আপনার যদি তাৎক্ষনিক ডলার দরকার হয় তবে, আপনি ফ্রীলান্সারের এর মাধ্যমে সরাসরি মানিবুকার্স থেতে সর্বনিম্ন 25$ থেকে সর্বোচ্চ 500$ পর্যন্ত জমা করাতে পারবেন। তবে, যত জমা করাবেন তার বিপরীতে নির্দিষ্ট ফিস কাটবে।
গ. New Milestone Payment: আপনি যদি বায়ার হিসাবে কাজে করেন তবে আপনার ওয়ার্কার বা প্রোভাইডারকে অগ্রীম পেমেন্ট করার জন্য এই অপশনটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে, এটির অর্থ এই নয় যে, আপনি ওয়ার্কার বা প্রোভাইডারকে পেমেন্ট দিয়ে দিলেন। এর অর্থ দ্বারায়, আপনি আপনার কাজে নির্ভরযোগ্যতা স্বরূপ ওয়ার্কার বা প্রোভাইডারকে তার একাউন্টে পেমেন্ট ঝুলায় দিলেন। সময় ও কথা মত কাজ শেষে তার রিকোয়েস্ট অনুযায়ী আপনি পেমেন্ট রিলিজ করে দিবেন।
ঘ. Manage Milestone Payments: এই অপশন থেকে আউটগোয়িং পেমেন্ট গুলো নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।
ঙ. Transfer Funds: সরাসরি বা কোন প্রোজেক্ট এর পেমেন্ট করতে এই মেন্যুর ব্যবহার। মেন্যুতে প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবেন। তবে হ্যা, বর্তমানে ফ্রীলান্সার এ কোন কারন ছাড়া (প্রোজেক্ট পেমেন্ট বাদে) ডলার ট্রান্সফার করলে একাউন্ট লক করা হচ্ছে, তাই এই ক্ষেত্রে সাবধান। একাউন্ট লক হলে তা আন-লক করার ঝামেলা অনেক।
চ. Withdraw Funds: এই মেন্যু থেকে ৪টি প্রক্রিয়ায় আপনি ফ্রীলান্সার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। ১. ফ্রীলান্সার ডেবিট কার্ড(পাইওনিয়ার কার্ড), ২. পেপাল, ৩. মানিবুকার্স এবং ৪. ওয়্যার ট্রান্সফার। যদিও সব উত্তোলন প্রক্রিয়া দেখানো সম্ভব না তবে আমি যেভাবে উত্তোলন করি তা শেয়ার করবো পরবর্তী যে কোন এক পোষ্ট-এ।
ছ. View Payments: Manage Milestone Payments- এর মতই।
জ. Affiliate Activity: ফ্রীলান্সারে আপনার রেফারেল এ কতজন নিবন্ধন করেছে এবং তা থেকে আপনার যদি কোন আয় হয়ে থাকে তো সেটি এখানে দেখতে পারবেন।
ঝ. Transaction History: আপনি ফ্রীলান্সারে যত লেনদেন করছেন তার সব বিস্তারিত তালিকা এখানে দেখতে পারবেন।
৯. Disputes: প্রোজেক্ট এবং মাইলস্টোন পেমেন্ট নিয়ে কোন সমস্যা বা ভুল বুঝাবুঝি হলে, তা ফ্রীলান্সার কর্তৃক এখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১১. Invite Friends: এটা ঠিক Affiliate Activity এর কাজ করে।আপনি আপনার ফ্রেন্ডস অন্যান্য কন্টাক্টদের আমন্ত্রন জানাতে পারেন এখানে নিবন্ধন এর জন্য। তাদের কাজের উপর ভিত্তি করে ফ্রীলান্সার ২০% আপনাকে পে করবে।
১২. Freemarket: মার্কেট মানেই বুঝতে পাচ্ছেন এখানে কেনা-বেচা হয়। বিভিন্ন রকমের বই, ডাটাবেজসহ এরকম আরো অনেক কিছুই এই সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন হয়।
১৪. Support: এখানে থেকে সাপোর্ট টিকেট সাবমিট করতে পারেন অথবা আগে থেকে করা থাকলে ভিউ টিকেট এ গিয়ে সরাসরি সাহায্য নিতে পারবেন ফ্রীলান্সার থেকে।
এই হল ফ্রীলান্সারের মেন্যু পরিচিতি। এতটুকুই জেনেই যে শেষ তা নয়। কাজ করতে করতে একসময় আরো অনেক কিছু আপনারা জানতে পারবেন। আমি যদি সব জানায় দেই তবে আপনাদের কোন স্বার্থকতা থাকবে না। কারন নিজে ঘাটাঘাটি করে যদি কিছু শিখেন তবে সেটি সারাজীন মনে থাকবে। আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।
আগামী পোষ্টে আবার কথা হবে।
সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন